হিমোগ্লোবিন কত হলে রক্ত দিতে হয়

3

 হিমোগ্লোবিন কত হলে রক্ত দিতে হয়

রক্তদান একটি মহৎ কাজ যা অনেক মানুষের জীবন বাঁচাতে সহায়ক হতে পারে। তবে রক্তদানের আগে কিছু শর্ত এবং মানদণ্ড পূরণ করতে হয়।

এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো হিমোগ্লোবিনের মাত্রা। আজকের এই ব্লগ পোস্টে আমরা আলোচনা করবো, হিমোগ্লোবিন কত হলে রক্ত দিতে হয় এবং কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ।

#### হিমোগ্লোবিন কী?

হিমোগ্লোবিন হলো এক ধরনের প্রোটিন যা আমাদের রক্তে থাকে এবং রক্তের লাল রঙের জন্য দায়ী।

এটি অক্সিজেনকে ফুসফুস থেকে শরীরের বিভিন্ন অংশে পৌঁছে দেয় এবং কার্বন ডাই অক্সাইডকে শরীর থেকে ফুসফুসে নিয়ে আসে।

হিমোগ্লোবিনের এই কাজের মাধ্যমে আমাদের শরীর সঠিকভাবে কাজ করতে পারে এবং শরীরের কোষগুলো পর্যাপ্ত অক্সিজেন পায়।

#### রক্তদানের জন্য হিমোগ্লোবিনের মানদণ্ড

রক্তদানের আগে রক্তদাতার হিমোগ্লোবিনের মাত্রা পরীক্ষা করা হয়।

এটি নিশ্চিত করার জন্য যে রক্তদাতা এবং রক্ত গ্রহণকারী উভয়ের জন্য রক্তদান নিরাপদ। সাধারণত, রক্তদানের জন্য নিম্নলিখিত হিমোগ্লোবিন মানদণ্ড পালন করা হয়:

1. **পুরুষদের জন্য**: পুরুষদের ক্ষেত্রে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমপক্ষে ১৩.০ গ্রাম/ডেসিলিটার হতে হবে।

2. **মহিলাদের জন্য**: মহিলাদের জন্য এই মাত্রা ১২.৫ গ্রাম/ডেসিলিটার হতে হবে।

এই মানদণ্ড নির্ধারণ করা হয়েছে যাতে রক্তদানের পরে রক্তদাতার শরীরে পর্যাপ্ত হিমোগ্লোবিন থেকে যায় এবং শরীরে অক্সিজেন পরিবহনের জন্য সমস্যা না হয়।

 

#### কেন হিমোগ্লোবিনের মাত্রা গুরুত্বপূর্ণ?

হিমোগ্লোবিনের মাত্রা রক্তদানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি রক্তদাতার স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করতে পারে।

যদি হিমোগ্লোবিনের মাত্রা খুব কম হয়, তাহলে রক্তদান করলে রক্তদাতা অ্যানিমিয়ার সমস্যায় পড়তে পারেন।

অ্যানিমিয়া হলো এমন একটি অবস্থা যেখানে শরীরে যথেষ্ট লোহিত রক্তকণিকা বা হিমোগ্লোবিন থাকে না, যার ফলে শরীরে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দিতে পারে।

 হিমোগ্লোবিন কত হলে রক্ত দিতে হয়

এটি ক্লান্তি, দুর্বলতা, মাথাব্যথা, এবং শ্বাসকষ্টের মতো বিভিন্ন উপসর্গের কারণ হতে পারে।

#### কিভাবে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা পরীক্ষা করা হয়?

রক্তদানের আগে, সাধারণত একটি ছোট রক্তের নমুনা নিয়ে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা পরীক্ষা করা হয়

এই পরীক্ষা বেশ দ্রুত এবং সহজ। এটি নিশ্চিত করে যে রক্তদাতা রক্তদান করার জন্য যোগ্য কিনা। যদি কোনো রক্তদাতার হিমোগ্লোবিনের মাত্রা মানদণ্ডের নিচে থাকে

তাহলে তাকে রক্তদান থেকে বিরত থাকতে বলা হয় এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টি গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়।

#### হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বৃদ্ধির উপায়

যদি আপনার হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কম থাকে এবং আপনি রক্তদানে আগ্রহী হন, তাহলে কিছু ধাপ অনুসরণ করে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ানো যেতে পারে:

1. **আয়রন সমৃদ্ধ খাবার**: পালং শাক, মাংস, ডাল, ও বীজ জাতীয় খাবার খেলে আয়রনের মাত্রা বৃদ্ধি পায় যা হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে সহায়ক।

2. **ফলিক অ্যাসিড**: লিভার, মটরশুটি, এবং সবুজ শাকসবজি খেলে ফলিক অ্যাসিডের ঘাটতি পূরণ হয়, যা লোহিত রক্তকণিকার উৎপাদনে সাহায্য করে।

3. **ভিটামিন সি**: ভিটামিন সি আয়রনের শোষণে সাহায্য করে। তাই ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার যেমন কমলা, লেবু, এবং স্ট্রবেরি গ্রহণ করলে আয়রনের শোষণ ভালো হয়।

4. **ভিটামিন বি১২**: ডিম, মাছ, এবং দুধ খেলে ভিটামিন বি১২ এর ঘাটতি পূরণ হয়, যা হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে সহায়ক।

#### রক্তদানের পরে হিমোগ্লোবিনের পর্যবেক্ষণ

রক্তদান করার পরেও হিমোগ্লোবিনের মাত্রা পর্যবেক্ষণ করা উচিত। রক্তদানের পর কিছু মানুষের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা সাময়িকভাবে কমে যেতে পারে।

তাই রক্তদানের পর পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া এবং পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ।

কিছুদিন পর পুনরায় হিমোগ্লোবিন পরীক্ষা করিয়ে নিশ্চিত হওয়া উচিত যে এটি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে।

#### উপসংহার

রক্তদান মানবতার সেবার এক অনন্য উপায়, কিন্তু এটি করার আগে নিজেকে নিশ্চিত করা জরুরি যে আপনি শারীরিকভাবে সক্ষম আছেন।

হিমোগ্লোবিনের মাত্রা একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক যা আপনাকে রক্তদানে যোগ্য কিনা তা নির্ধারণ করতে সাহায্য করে।

রক্তদানের জন্য পুরুষদের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমপক্ষে ১৩.০ গ্রাম/ডেসিলিটার এবং মহিলাদের ১২.৫ গ্রাম/ডেসিলিটার হওয়া প্রয়োজন।

 হিমোগ্লোবিন কত হলে রক্ত দিতে হয়

সঠিকভাবে নিজের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা পর্যবেক্ষণ করে এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টি গ্রহণ করে আপনি

রক্তদানের জন্য প্রস্তুতি নিতে পারেন এবং সমাজে একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারেন।

রক্তদান করুন, জীবন বাঁচান।




Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *